
“যে বাংলা থেকে পুরো ভারতকে বন্দেমাতরম ভাবনাতে বেঁধে দিয়েছে সেই বাংলায় মমতা দিদি বহিরাগত কি কথা বলছেন? এই ভূমি বঙ্কিমবাবু, রবি ঠাকুরের, সুভাষ বোসের, মাতঙ্গিনী হাজরার, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বঙ্গভূমি। আমরা সবাই এই ভারত ভূমির সন্তান। এই ভূমিতে কোন ভারতবাসী বহিরাগত নয়।” দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে কাঁথির রেল স্টেশন সংলগ্ন প্রগতি ময়দান থেকে নিজের ভাষনের শুরুতে এভাবেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃনমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ এখন পাখির চোখ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের কাছে। বাংলায় পড়ে থেকে লাগাতার ভোট প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দিল্লির নেতারা। বুধবার খোদ শুভেন্দু অধিকারীর গড় কাঁথিতে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকাল ১১.১১মিনিট নাগাদ হেলিকপ্টারে করে মোদি কাঁথিতে এসে পৌঁছান। এরপর সেখানেই মঞ্চ থেকে মোদি তিনি তার বক্তব্যে বহিরাগত ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া বার্তা দেন।
এদিনের সভায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভাবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী, নন্দীগ্রামে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্যান্যরা।
এদিন মোদী বলেন, “দিদি আপনি খেলা খেলেন। আমরা সেবা করবো। খেলা নয়, সেবা হবে। বিজেপির একটাই মন্ত্র গরিবের রোজগার, গরিবের বাড়ি, গরীবের সম্মান। বাংলার মানুষ দিদির খেলা বুঝে গিয়েছেন।”
কয়েকদিন আগে নন্দীগ্রামে গিয়ে আহত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদি এদিন বলেন, “আপনারা এখানে দেখছেন নন্দীগ্রামের বদনাম করার জন্য একের পর এক কিভাবে মিথ্যা কথা বলছেন। দিদি আপনাকে নন্দীগ্রামের মানুষ অনেক মান সম্মান দিয়েছিল কিন্তু আপনি নন্দীগ্রামের মানুষের বদনাম করছেন। দিদির এই অপমান নন্দীগ্রামের লোক কোন ভাবেই সইবে না। নির্বাচনে নন্দীগ্রামের মানুষ এই অপমানের সাজা দেবে।”
তৃণমূলের কাটমানি সংস্কৃতির কথা মোদি এদিন উল্লেখ করে বলেন, “তৃণমূলের সরকার কাটমানি, সিন্ডিকেট আর তোলাবাজি নিয়ে রয়েছে। তৃণমূলের সরকার হিংসা আর অত্যাচারের অন্ধকারে রয়েছে। দিদির সরকার অন্ধকার করে দিয়েছেন কিন্তু ডবল ইঞ্জিন বিজেপির সরকার সোনার বাংলা গড়বে।”
কাঁথির বুকে প্রায় ৩০ বছর পর এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রীর জনসভা হয়। আর সেই সভাতে জণমানুষের ঢল কার্যত উপচে পড়ে। সবার সামনে উপস্থিত মানুষের ঢল দেখে মোদি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, “তৃণমূলকে এই নির্বাচনে সাজা দেওয়ার জন্য বিশাল সংখ্যায় মানুষ এখানে এসেছেন। আমার যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই শুধু লোক আর লোক। এই ময়দান ছোট পড়ে গিয়েছে। আমি হেলিপ্যাড থেকে দেখছিলাম হাজার হাজার মানুষ ওখানে আটকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দিদি আপনি দেখে নিন বাংলার মানুষেরা ঠিক করে নিয়েছেন তৃণমূলের খেলা শেষ হবে, বিকাশ আরম্ভ হবে। এখানকার মানুষের বিকাশ বিজেপির সংকল্প। বাংলা চায় শিক্ষা, শিল্প, কর্মসংস্থান, নারী সুরক্ষা, কৃষক সম্মান, বাংলা চায় বিজেপি সরকার।”
ডবল ইঞ্জিন সরকার গড়ার ডাক দিয়ে মোদি বলেন, “বাংলার মানুষের জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে কাজ করছে তাতে বাংলার মানুষ বাংলায় ডবল ইঞ্জিন সরকার গড়বে। বাংলায় বিজেপির সংকল্প পত্র ইতিমধ্যে সামনে এসেছে। বাংলায় বিজেপির টিম এই সংকল্প পত্র বানিয়েছেন। বাংলার জনতার আওয়াজ শুনতে পেয়ে এই সংকল্প পত্র। মেদিনীপুর ভারতবর্ষের আত্মনির্ভরতার সবথেকে বড় কেন্দ্র। কিন্তু দিদি এখানকার কৃষকদের আধুনিক মান্ডির সুবিধা, কোল্ডস্টোরেজের সুবিধা, ফুড প্রসেসিংয়ের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন।”
বাংলার কৃষকদের বঞ্চিত রাখার আরও অভিযোগ তুলে এদিন মোদি বলেন, “বাংলার কৃষকরা ভুলে যাননি কিভাবে দিদি তাদের সাথে নির্মমতা দেখিয়েছেন। দিদি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। এই টাকা তৃণমূলের সরকার কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে দিতে দেয়নি। এই পয়সার দিল্লির সরকার বাংলার কৃষকদের জন্য দিতে চাইছে। কিন্তু দিদি কৃষকদের সঙ্গে শত্রুতা করে ভারত সরকারের পয়সা তাদের দিতে দিচ্ছে না। বাংলার কৃষকরা আপনারা একটা কথা লিখে রাখুন দু’মাসের মধ্যে বাংলার বিকাশের জন্য বিজেপি সরকার বানানো হবে। আর এখানকার কৃষকরা তিন সালের পয়সা দেওয়া হবে। ভূমিহীন কৃষক ও মৎস্যজীবীদের বাংলায় বিজেপি সাহায্য করার সংকল্প করেছে। এটাই ডবল ইঞ্জিন সরকারের ক্ষমতা যা বাংলায় দেখানো হবে।”