
ভাস্কর ব্রত পতি
ভাত খাওয়ার পরে শীতের দুপুরবেলায় গ্রামের এক অতি পরিচিত মেয়েলি কাজ — ‘উকুন বাছা’!!
‘উকুন মারা’। সিঙের সরু দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে কেশগুচ্ছ থেকে টেনে আনা হয় নিখি থেকে ড্যাঙর টাইপের উকুন। এক মেয়ে অন্য মেয়ের পেছনে বসে এসব করেন। কিন্তু এখন মহিলারা খুব রূপবিলাসী হয়ে উঠেছেন। ফলে চুলের যত্ন কিরকম নিতে হয়, তা তাঁরা ভালোই জানেন। আর মাথার চুলে “উকুন চাষ” তাঁদের সহ্য হয়না। শীতের দুপুরে উকুন বেছে পটাস পটাস করে মারতে মারতে নানা ধরনের P.N.P.C. এখন আর দেখাই যায়না বললেই হয়। এজন্য দায়ী কিন্তু বাজারের নানা ধরনের কন্ডিশনার ওয়েল, নামিদামি শ্যাম্পু, সাবান আর হেয়ার স্পার কেরামতি!
সংস্কৃত শব্দ ‘উৎকুণ’ থেকে এসেছে ‘উকুন’ কথাটি।
উৎকুণ (সংস্কৃত)>উক্কুণ(প্রাকৃত)>উকুন(বাংলা)
উকুনকে হিন্দিতে বলে ‘উড়ুস’। সংস্কৃত কোষে ‘উকুন’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে।
সেই ‘উকুনে বুড়ি’র গল্প কিন্তু আমরা কেউই ভুলিনি এখনও! ‘উকুনে বুড়ি পুড়ে মোলো, বক সাতদিন উপোস রইলো……’! গোপীচন্দ্র লিখেছেন, ‘উকুন ডালি ডালি’। রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় লিখেছেন, ‘উকুন নিকি করে কিলিবিলি’! সত্যিই তো, যে মহিলার মাথায় উকুন কিলিবিলি করে, তাঁর মতো ‘উকুনে মাথা’ মহিলার সবসময়ের ‘হাতের কাজ’ চলে!!
চুলে হাত ঢুকিয়ে জাপটে ধরে টেনে বের করে বাম হাতের বুড়ো আঙুলের নোখের উপর রেখে ডান হাতের বুড়ো আঙুলের নোখ দিয়ে টিপে পুটুস করে পেট ফাটানো আর কি!! ঠিক যেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’ অনুসারে ‘শকুন শিয়রে বসি, বাছিবে উকুন’।